❒ ফিলিস্তিনি বংশধর রক্ষায় শুক্রাণু পাচার
ধ্রুব নিউজ
ফিলিস্তিনি বংশধর রক্ষায় শুক্রাণু পাচারের অবিশ্বাস্য কৌশল নিয়ে নির্মিত মঞ্চনাটক ‘দি গ্রেট স্মাগলার’ হৃদয় ছুঁয়েছে দর্শকদের। যখন ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, তখন যশোরে শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়েছে এই নাটক।
দীর্ঘদিনের আগ্রাসন, দমন–পীড়ন আর হত্যাযজ্ঞে ফিলিস্তিন আজ কার্যত এক শ্মশানভূমি। অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত, ঘরবাড়ি ধ্বংস। তবুও ফিলিস্তিনিরা থেমে থাকেনি—তারা তাদের অস্তিত্ব ও বংশধর রক্ষার জন্য খুঁজে নিয়েছে অভিনব পথ। সেই গল্পই নাট্যকার তুলে ধরেছেন ‘দি গ্রেট স্মাগলার’-এ—যেখানে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনি পুরুষরা অকল্পনীয় উপায়ে স্ত্রীদের মাতৃত্বের আনন্দ দিচ্ছেন, টিকিয়ে রাখছেন জাতির বংশধারা।
শুক্রবার ও শনিবার সন্ধ্যায় যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে শব্দ থিয়েটারের এই নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। দর্শকাসনে ছিল নিঃশব্দ নীরবতা—মঞ্চে যখন দেখা গেল বন্দি তামিরের গল্প, যে ছয় বছর কারাবন্দি থেকেও বাবা হয়েছে!
নাটকের আবহে দেখা যায়—ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি তামিরের দশ বছরের সাজা। ছয় বছর পর তার স্ত্রী জান্নি খালিদ দেখা করতে যান, কোলে দুই বছরের শিশু। কারা কর্তৃপক্ষ হতবাক—এ শিশুর বাবা তামির কীভাবে হতে পারে, যখন সে ছয় বছর ধরে কারাগারে বন্দি? ডিএনএ পরীক্ষায় সত্য প্রকাশ পায়—শিশুটি সত্যিই তামিরের সন্তান।
এই দৃশ্যেই দর্শকরা নিঃশব্দে কেঁদেছেন। নাটকটি দেখিয়েছে—কীভাবে বন্দি ফিলিস্তিনিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুক্রাণু পাচার করে প্রজননের অধিকার ও জাতিসত্তা টিকিয়ে রাখছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের সহায়তায়, কারাগারের কঠোর নিরাপত্তা ভেদ করে, তারা রচনা করছে জীবনের অলৌকিক অধ্যায়।
ফিলিস্তিনের বর্তমান বাস্তবতা, দমন-পীড়ন, হত্যাযজ্ঞ এবং নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্রের মাঝেও যে এক জাতি জীবনকে জয় করতে জানে—‘দি গ্রেট স্মাগলার’ সেই অদম্য মানবগাথা। নাটকটির প্রতিটি দৃশ্য দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে; অনেকেই অশ্রুসিক্ত হয়েছেন নাটকের আবেগঘন পর্বগুলোতে।
ফিলিস্তিন মানেই আমাদের মনে আসে সংঘাত, নিপীড়ন, আর বেদনার ইতিহাস। কিন্তু এই নাটক মনে করিয়ে দেয়—এই বেদনার মাঝেও জন্ম নেয় সাহস, প্রেম, এবং আত্মত্যাগের মহাকাব্য।
অভিনয়ে ছিলেন : তামির চরিত্রে মাসউদ জামান, জান্নি চরিত্রে রুকাইয়া ইসলাম, ফাত্তা চরিত্রে সোহেল রানা, বাবা চরিত্রে শামসুদ্দীন হোসাইন, মা চরিত্রে শাউলী পৃথী মেধা, ইমাম চরিত্রে বায়জিদ হোসেন, ডাক্তার চরিত্রে সাহিদুর রহমান, মোসাদ অফিসার চরিত্রে রিফাত মাহমুদসহ আরও অনেকে।
সূত্রধার ছিলেন অরুণ মজুমদার। নাটকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সোহেল মাসুদ হাসান টিটো।