বিশেষ প্রতিনিধি
❒ ঘূর্ণিঝড় মোন্থা ছবি: প্রতীকী
বলা হচ্ছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এটি বাংলাদেশ নয় বরং ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা। তবে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এর প্রভাব পড়তে পারে। এখন জানা দরকার আসছে যে ঘূর্ণিঝড় 'মোন্থা', তার নাম আসলে মোন্থা হলো কেন?
বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল—বিশেষত বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চল—প্রতি বছরই কোনো না কোনো ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়। এই ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়গুলো বিপুল পরিমাণ ধ্বংসাত্মক শক্তি বহন করে আনে। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এমন একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোন্থা’ (Montha)। এই নামটি কেবল একটি আবহাওয়ার ঘটনাকে চিহ্নিত করার প্রতীক নয়; এর পেছনে লুকিয়ে আছে একটি গভীর সাংস্কৃতিক অর্থ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং আধুনিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কৌশল।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে, সত্তরের দশক বা নব্বইয়ের দশকের মতো সময়ে আঘাত হানা ভয়াবহ ঝড়গুলোর কোনো নির্দিষ্ট নাম ছিল না। সেগুলোকে সনাক্ত করতে হতো কেবল তারিখ বা আঘাত হানার স্থান দিয়ে। কিন্তু আধুনিক আবহাওয়াবিদ্যা এবং দ্রুত সতর্কতা ব্যবস্থার কারণে, প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের একটি সুনির্দিষ্ট নাম অপরিহার্য। এই নামগুলোই জনসচেতনতা বৃদ্ধি, মিডিয়া কভারেজ এবং জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঘূর্ণিঝড় 'মোন্থা' নামটি এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড থেকে। বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস যে দীর্ঘ তালিকা তৈরি করেছে, সেই তালিকা থেকেই পালাক্রমে এই নামটি বেছে নেওয়া হয়েছে।
এই নামকরণের মাধ্যমে প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক শক্তির বিপরীতে একটি স্নিগ্ধ ও শান্তিময় শব্দের ব্যবহার এক ধরনের বৈপরীত্যের জন্ম দেয়। সাধারণত, নামকরণের ক্ষেত্রে এমন নিরপেক্ষ ও সুন্দর নামগুলোই বেছে নেওয়া হয়, যা সহজে উচ্চারণ করা যায় এবং কোনো দেশের সংস্কৃতি বা ভাবাবেগে আঘাত করে না। থাই সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই এই শব্দটি প্রকৃতির ভয়ংকর রূপের মাঝেও এক ধরনের কাব্যিক সংযোগ স্থাপন করে।
‘মোন্থা’ নামটি যেমন থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি থেকে এসেছে, তেমনি অতীতে ব্যবহার হওয়া অনেক ঘূর্ণিঝড়ের নামও এসেছে এই অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে। উদাহরণস্বরূপ, ইয়েমেন থেকে আসা ‘মোখা’, বাংলাদেশের দেওয়া ‘ফণি’ বা ‘আমফান’, ভারতের দেওয়া ‘অগ্নি’ বা ‘বায়ু’ ইত্যাদি নামগুলো আন্তর্জাতিক ঘূর্ণিঝড় নামকরণের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। এই বৈচিত্র্য প্রমাণ করে যে, দুর্যোগের মোকাবিলায় এই অঞ্চলের সব দেশ একে অপরের সঙ্গে কতটা নিবিড়ভাবে সংযুক্ত।