ধ্রুব নিউজ ডেস্ক
❒ বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে চীন। ছবি: ছবি: সিনহুয়া
২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ট্রেন ট্র্যাকে নামানো হয়। ট্রেনটি বর্তমানে চীনের সর্বোচ্চ গতির চলমান সিআর-৪০০ ফুজিং ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুতগতির। ফুজিং ট্রেনগুলো প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে চলে। আর নতুন সিআর-৪৫০ মডেলের এই ট্রেনটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম।
বিশ্বের দ্রুততম উচ্চগতির এই ট্রেনের প্রোটোটাইপের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে চীন। বেইজিংয়ের রিং রেলওয়েতে এখনও এর পরীক্ষামূলক পরিচালনা চলছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের সময় এর সর্বোচ্চ গতি নির্ধারিত হবে প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার। চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এই খবর দিয়েছে।
ট্রেনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি করপোরেশন লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ফেং জানিয়েছেন, সিআর-৪৫০ উচ্চগতির ট্রেনে প্রযুক্তিগত বিশাল পরিবর্তন আনা হয়েছে। তত্ত্ব, প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, মানদণ্ড ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা– সব ক্ষেত্রেই নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে এই ট্রেন।
নজিরবিহীন গতি অর্জনের জন্য প্রকৌশলীরা ট্রেনটির ট্র্যাকশন পাওয়ার (ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা) উন্নত করেছেন। ডায়নামিক পারফরম্যান্স বা গতিশীল অবস্থায় ট্রেনটিতে যাবতীয় পরিবর্তন পরিমাপের বিষয়টিতেও অগ্রগতি আনা হয়েছে। এ ছাড়া প্যান্টোগ্রাফ সিস্টেম বা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি ট্রেনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, সেটাতেও লেগেছে অত্যাধুনিকতার ছোঁয়া।
ওয়াংয়ের ভাষায়, ট্রেনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াটার-কুলড পারমানেন্ট ম্যাগনেট ট্র্যাকশন সিস্টেম, নতুন প্রজন্মের উচ্চ স্থিতিশীলতা বগি এবং একাধিক উদ্ভাবনী সিস্টেম। যার ফলে দীর্ঘ সময় উচ্চগতিতে চলাচলেও এটি স্থিতিশীল থাকে।
তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সিআর-৪৫০ এক ধাপ এগিয়ে। এতে রয়েছে মাল্টিলেয়ার ইমার্জেন্সি ব্রেক নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং চার হাজারেরও বেশি অনবোর্ড মনিটরিং সেন্সর, যা চলমান অবস্থায় ট্রেনের গিয়ার, পুরো ট্রেন, হাইভোল্টেজ প্যান্টোগ্রাফ, ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা–সবকিছুই তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ছাড়া ওভার দ্য হরাইজন শনাক্তকরণ ব্যবস্থাও যুক্ত হয়েছে এতে। এই ব্যবস্থা ট্রেনের সামনে ট্র্যাকের জরুরি পরিস্থিতি আগেভাগে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও এসেছে বিপ্লব। বগির ‘স্ট্রিমলাইনড কাওলিং’ ধাঁচের নকশা বাতাসের ঘর্ষণ ও প্রতিরোধ কমিয়েছে, আর নতুন হালকা উপকরণ ও প্রযুক্তি ট্রেনের মোট ওজন ১০ শতাংশ কমিয়েছে এবং চলাচলের ক্ষেত্রে ট্র্যাকের সঙ্গে চাকার এবং সামগ্রিক ঘর্ষণ প্রতিরোধ ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে।
ট্রেনের শব্দ নিয়ন্ত্রণেও এসেছে অগ্রগতি। সাতটি নতুন প্রযুক্তি যেমন– সাউন্ড-অ্যাবজর্বিং উপকরণ ও উন্নত অ্যারোডায়নামিক নকশা ট্রেনের অভ্যন্তরীণ শব্দ ২ ডেসিবল কমিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পাচ্ছেন আরও নিঃশব্দ ও আরামদায়ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা। তা ছাড়া সিআর-৪৫০-এ যুক্ত হয়েছে একাধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ফিচার, যা ট্রেনের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।চালকের সঙ্গে যোগাযোগ, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ এবং যাত্রীসেবা– সব দিক থেকেই এই ট্রেন আগের সব মডেলের চেয়ে এগিয়ে।
নতুন মডেলের এই ট্রেন চীনের পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করবে। এটি মাত্র ৪ মিনিটি ৪০ সেকেন্ডে ৩৫০ ঘণ্টা গতিতে পৌঁছাতে পারে, যা পুরোনো মডেলগুলোর তুলনায় ১০০ সেকেন্ডেরও বেশি দ্রুত। প্রকৌশলীরা পাঁচ বছর ধরে পরিশ্রম করে এই সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছেন।