সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

এলিয়েনের সাথে মানুষের প্রথম সাক্ষাৎ

ধ্রুব ফিচার ধ্রুব ফিচার
প্রকাশ : শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর,২০২৫, ০৮:৪২ এ এম
এলিয়েনের সাথে মানুষের প্রথম সাক্ষাৎ

আর্থার সি. ক্লার্কের বিখ্যাত উক্তিটি দিয়েই শুরু করা যাক: "দুটো সম্ভাবনা বিরাজ করছে। মহাবিশ্বে আমরা হয় নিঃসঙ্গ অথবা আমরা নিঃসঙ্গ নই। দুটোই আমাদের জন্য সমানভাবে ভয়ংকর।"

এলিয়েন (Alien) শব্দটি মূলত ভিন্ন ধরনের বা অপরিচিত বোঝায়। হ্যারি হ্যারিসনের 'প্লেগ ফ্রম দ্য স্পেস' উপন্যাসের দুটি পঙ্‌ক্তিতে এই ধারণার একটি চমৎকার প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়: তারা পরস্পরের দিকে তাকায়—মানুষ এবং এলিয়েন; আরও সঠিকভাবে বলতে হয় এলিয়েন এবং ইলিয়েন—কারণ পরস্পরের কাছে তারা এলিয়েন। অর্থাৎ, আমরা যাদের এলিয়েন ভাবছি, তারাও তো আমাদের এলিয়েন ভাবছে! আমাদের কাছে যা চরম সৌন্দর্য, অন্য ভুবনের এলিয়েনের কাছে তা হয়তো চরম কুৎসিত।

এলিয়েনের সাথে মানুষের প্রথম সাক্ষাৎ ও প্রাচীন ভাবনা
এলিয়েন নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিতরা দাবি করেন যে খ্রিস্টজন্মের ১৪৪০ বছর আগে (প্রায় ৩,৪৬৩ বছর আগে) প্রাচীন মিসরের আকাশে একটি অগ্নিবিস্ফোরক চাকতি পরিভ্রমণ করেছিল। পরবর্তীকালে এই চাকতিই আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট বা ইউএফও (UFO) হিসেবে পরিচিতি পায় এবং এর যাত্রীকেই এলিয়েন মনে করা হয়।

প্রাচীন দার্শনিকদের মধ্যেও এলিয়েনের ধারণা ছিল। খ্রিস্টজন্মের ৬১০ বছর আগে প্রাচীন গ্রিসের অ্যানাক্সিমেন্ডার 'কসমিক প্লুরালিজম'-এর ধারণাটি দেন—যে মহাবিশ্বে মানুষই একমাত্র জীবিত ও সঞ্চরণশীল প্রাণী নয়। দার্শনিক হেরোডোটাসকে লেখা এপিকিউরাসের চিঠিতেও উল্লেখ করা হয়েছে, "আমাদের পৃথিবীর মতো এবং আমাদের পৃথিবীর চেয়ে ভিন্ন ধরনের অগণিত বিশ্ব রয়েছে..."ফার্মি প্যারাডক্স: মহাবিশ্বের অপচয় ও নীরবতার কারণ
 বিংশ শতকের শুরুর দিকে পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি একটি যুগান্তকারী প্রশ্ন তোলেন, যা 'ফার্মি প্যারাডক্স' নামে পরিচিতি লাভ করে: বিশাল পরিসরের এই মহাবিশ্বে আমরা কেন এখনো বুদ্ধিদীপ্ত 'এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল লাইফ' খুঁজে পাইনি?

কার্ল সাগান তাঁর নাট্যচিত্র 'কনটাক্ট'-এ এর উত্তরে লিখেছেন, "যদি শুধু আমরাই হয়ে থাকি, তাহলে তো মহাকাশের বিপুল পরিসরের ভয়ংকর অপচয়।"ফার্মির প্রশ্নটি বিপরীতভাবেও ভাবা যেতে পারে—এলিয়েনরাই বা মানুষকে খুঁজে পায়নি কেন?বিদ্রূপাত্মক উত্তর: বিল ওয়াটারসনের কমিক স্ট্রিপ 'কেলডিন অ্যান্ড হনর্স'-এর মতে, মহাবিশ্বের বুদ্ধিমান জীবন নিশ্চিত প্রমাণ দিয়েছে যে পৃথিবীর মানুষের সাথে যোগাযোগ করার মতো বোকামি তারা করেনি।
আত্ম-অহংকার ভাঙা: এলিয়েন হয়তো মানুষকে নিকৃষ্ট প্রজাতির প্রাণী মনে করে আগ্রহী হয়ে ওঠেনি। যদি তাই হয়, তবে এটি মানুষের বিদ্যাবুদ্ধির অহংকারে এক বিশাল চপেটাঘাত।
কনস্ট্যানটিন মাইলোকোভস্কি মনে করেন, মহাবিশ্বের সর্বত্রই সেখানকার উপযোগী যথার্থ জীবন বিরাজমান। ১৯৩০ সালে বিজ্ঞানী ওয়ার্নার ফন ব্রাউনও বলেছেন, "আমাদের মহাকাশ হচ্ছে মহাবিশ্বের অসংখ্য মহাকাশের একটি। কাজেই এই অতিকায় পরিসরে একমাত্র আমরাই জীবন্ত প্রাণী—এটা ভাবা মহামূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।"

এলিয়েন সন্ধানে বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা ও নতুন তত্ত্ব
জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও মহাকাশচারী ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক ১৯৬০ সালে প্রথম এলিয়েনের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগ ব্যর্থ হলেও এলিয়েন সম্ভাবনা নিয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান সম্প্রসারিত হয়, যা বর্তমানে ড্রেক থিওরি নামে পরিচিত।

মহাকাশবিজ্ঞানীরা সৌরজগতে চারটি সম্ভাব্য এলিয়েন জীবনের স্থান নির্ধারণ করেছেন: মঙ্গলগ্রহের ভূগর্ভ, শনির উপগ্রহ এনসেলাডাস এবং জুপিটারের উপগ্রহ ইউরোপা ও ক্যালিস্তো।

রহস্যময় তত্ত্বসমূহ:
গ্রেট ফিল্টার (Great Filter): এটি একটি তাত্ত্বিক শক্তি ও বাধা, যা জাগতিক সভ্যতা ও এলিয়েনের মধ্যে দেয়াল সৃষ্টি করে রেখেছে এবং পৃথিবীর মানুষকে এলিয়েনের সাথে যোগাযোগ করা থেকে বিরত রাখছে।
এস্টিভেশন হাইপোথিসিস (Aestivation Hypothesis): এই তত্ত্ব অনুসারে, এলিয়েনরা বর্তমানে গভীর হাইবারনেশনে রয়েছে, যেমন ভালুক বা ব্যাঙ দীর্ঘ শীতনিদ্রায় যায়।
গাইয়ান বটলনেক তত্ত্ব (Gaian Bottleneck theory): এই তত্ত্ব অনুযায়ী, জীবনের উদ্ভব ও বিকাশের জন্য বিশেষ ধরনের পরিবেশগত অবস্থা বিরাজ করা প্রয়োজন, যা পৃথিবী ছাড়া অন্য কোথাও না থাকায় এলিয়েন থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।
 নতুন আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ:
 সৌরজগতের বাইরে (Exoplanet) প্রায় ৩৮০০ এক্সপ্ল্যানেট চিহ্নিত হয়েছে। তবে ধারণা করা হয় পৃথিবীর মতো গ্রহের সংখ্যা ৪০ বিলিয়ন।
এলিয়েন অতি প্রাচীনতম প্রাণীর একটি। টার্নবুল মনে করেন, এদের জন্ম ৩ বিলিয়ন বছর আগে। মানুষের উদ্ভব হয়েছে মাত্র ৩ লক্ষ ১৫ হাজার বছর আগে।
বায়োসিগনেচার (যেমন মিথেন গ্যাস) প্রাণের অস্তিত্বের সাক্ষ্য দেয়। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এখন অক্সিজেন-ওজোনের সাথে মিশে থাকা মিথেনের অনুসন্ধান করেন।

সাম্প্রতিক রিপোর্ট ও 'এলিয়েন সত্য'
সাম্প্রতিক সময়ে এলিয়েনদের উপস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।পেন্টাগন রিপোর্ট (২০২১): ২০০৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ১৪৪টি ইউএফও দেখার ঘটনা ঘটেছে, যাকে পেন্টাগন ইউএপি—আনআইডেন্টিফাইড এরিয়েল ফেনোমেনা—হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা মনে করে, এলিয়েন কিংবা ইউএপির শক্তির উৎস হতে পারে ব্ল্যাকহোল, যেখানে এলিয়েন সভ্যতা গড়ে উঠে থাকতে পারে।
ভিন্ন গ্রহের ধারণা: এলিয়েন গ্রহগুলো কেন পৃথিবীর মতো হতে যাবে? যেমন হাইসিয়ান প্ল্যানেট বিপুল পরিমাণ হাইড্রোজেনসমৃদ্ধ এবং পৃথিবীর চেয়ে আড়াই গুণ বড়।
অদ্ভুত গতিশীল বস্তু: ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর কানাডিয়ান নভোচারী রবার্ট ওয়েরিক তাঁর টেলিস্কোপে একটি মহাজাগতিক বস্তুকণা দেখেন, যার গতি ছিল স্বাভাবিক গতির প্রায় পাঁচ গুণ—ঘণ্টায় দুই লক্ষ মাইল। এটা কি এলিয়েনদের কোনো বাহন?
শার্লক হোমসের উক্তি দিয়ে এই আলোচনা শেষ করা যায়: "আপনি যখন অসম্ভবকে অপসারণ করবেন, অবশিষ্ট যা থাকবে, অসম্ভব মনে হলেও সেটাই সত্য।"

এলিয়েন সত্য। তবে আমাদের যেসব এলিয়েন সিনেমা দেখতে হয়, তার বড় অংশই 'ইনভেশন অব দ্য এলিয়েন'—অর্থাৎ পৃথিবী আক্রমণ। এলিয়েনদের বাসভূমি দখলে নিতে না পারার ভাবনাটিই আসলে আমাদের কল্পনার দীনতা!

ধ্রুব নিউজের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

💬 Comments

Login | Register
Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)