ধ্রুব নিউজ ডেস্ক
আপনি একের পর এক চাকরির জন্য সিভি জমা দিচ্ছেন, কিন্তু ইন্টারভিউ বা নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ডাক পাচ্ছেন না? হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়তো কিছু সাধারণ ভুল আপনার সুযোগ নষ্ট করছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই ভুলগুলো এবং কীভাবে সেগুলো শুধরে নেবেন।
১. কাঠামোগত ত্রুটি ও অপ্রাসঙ্গিক তথ্য
অনেকের সিভি দেখলেই মনে হয় এলোমেলো। এর কোনো পেশাদার ফরম্যাট থাকে না, আবার অপ্রাসঙ্গিক তথ্যে ভরা থাকে। মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ লামিয়া বুশরা বলেন, সিভি হতে হবে সুনির্দিষ্ট ও পেশাদার ফরম্যাটের। ব্যক্তিগত তথ্য, সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ার লক্ষ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, পুরস্কার ও ভাষাজ্ঞান—সবকিছু একটি ছকে উপস্থাপন করুন। কেবল পদ-উপযোগী ও প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলোকেই গুরুত্ব দিন।
২. প্রতিটি চাকরির জন্য একই সিভি ব্যবহার
সব চাকরির জন্য একই সিভি পাঠানো একটি বড় ভুল। প্রতিটি চাকরির পদের বিবরণ (Job Description) ভালোভাবে পড়ুন এবং সেই অনুযায়ী আপনার সিভির অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাগুলোকে সাজান। যে পদের জন্য আবেদন করছেন, সেখানে আপনার কোন অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে, তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন।
৩. ভুল বা অতিরঞ্জিত তথ্যের ব্যবহার
চাকরি পাওয়ার লোভে অনেকে সিভিতে অতিরঞ্জিত বা মিথ্যা তথ্য যোগ করেন। মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ রুবিনা খান সতর্ক করে দেন, "আপনি যা পারেন, যেটুকু করেছেন—সেটুকুই বলুন।" বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অর্জনগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরুন। পড়াশোনা বা চাকরিতে কোনো বিরতি থাকলে তা সিভিতে উল্লেখ করুন, কিন্তু ভুয়া তথ্য দেবেন না। কারণ, এসব তথ্য পরবর্তী যাচাইয়ে ধরা পড়লে আপনার ওপর থেকে নিয়োগকর্তার আস্থা উঠে যাবে।
৪. ভুল চ্যানেলে সিভি পাঠানো বা দুর্বল ইমেইল সাবজেক্ট
সিভি পাঠানোর সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করাও একটি সাধারণ ভুল। যেখানে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে, সেখানে নির্ধারিত ওয়েবসাইট বা ফরমের মাধ্যমেই সিভি জমা দিন। যদি ইমেইলে পাঠান, তাহলে ইমেইলের ‘Subject’ অংশে পদের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করুন (যেমন: আপনার নাম_পদের নাম_CV.pdf)। ফাইলের নামকরণেও পেশাদার ফরম্যাট ব্যবহার করুন। ত্রুটিপূর্ণ সাবজেক্ট বা ফাইল ফরম্যাটের কারণে আপনার সিভি হয়তো দেখাই হচ্ছে না।
৫. কভার লেটার না দেওয়া বা দুর্বল কভার লেটার
অনেকে সিভি দিলেও কভার লেটার দেন না, বা দিলেও সেটি দায়সারা গোছের হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-এর অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ মনে করেন, কভার লেটার হলো আপনার আত্মপ্রকাশের সুযোগ। এক পৃষ্ঠার এই চিঠিতে আপনি কেন এই চাকরিটির জন্য উপযুক্ত, তা আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরুন, যাতে নিয়োগকর্তার মনে আপনার দক্ষতার ওপর আস্থা তৈরি হয়।
৬. অপ্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরা
সিভিতে সব ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা ঢুকিয়ে ফেললে চাকরিদাতার জন্য আপনার মূল যোগ্যতা খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে। অধ্যাপক খালেদ মাহমুদের পরামর্শ হলো, কেবল পদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাই উল্লেখ করুন। প্রতিটি কাজের বর্ণনায় আপনার দায়িত্ব ও অবদান সংক্ষেপে লিখুন। যদি নতুন চাকরি খুঁজে থাকেন, তাহলে ট্রেনিং বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাব কার্যক্রম বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত থাকলে সেই তথ্য ও কাজের বিস্তারিত উল্লেখ করুন।
৭. যোগাযোগের তথ্য ভুল বা অসম্পূর্ণ
সিভিতে দেওয়া ফোন নম্বর বা ইমেইল আইডি ভুল থাকলে বা ঠিকমতো সাড়া না দিলে আপনার ডাক আসার সম্ভাবনা কমে যায়। গ্রামীণ ডানোন ফুডস লিমিটেডের পরিচালক সুরাইয়া সিদ্দিকা বলছেন, "সব সময় হালনাগাদ মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল ব্যবহার করুন।" প্রয়োজনে দুটি নম্বর দিন। unprofessional ই-মেইল ঠিকানা (যেমন: coolboy123@gmail.com) ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৮. দুর্বল অনলাইন প্রোফাইল
আজকাল অনেক নিয়োগকর্তা আবেদনকারীর LinkedIn প্রোফাইল বা ফেসবুক ঘেঁটে দেখেন। সেখানে যদি সিভির সঙ্গে সাংঘর্ষিক তথ্য থাকে বা কোনো নেতিবাচক কিছু থাকে, তাহলে তা আপনার জন্য খারাপ হতে পারে। একটি পেশাদার LinkedIn প্রোফাইল তৈরি করুন এবং সেখানে আপনার অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও দক্ষতা তুলে ধরুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শালীনতা বজায় রাখুন। সিভির নাম এবং অনলাইন প্রোফাইলের নাম একই রাখুন।
৯. বানান-ব্যাকরণ ও ছবির ভুল
সিভি বা কভার লেটারে বানান ভুল বা অশুদ্ধ ব্যাকরণ নিয়োগকর্তার মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। সুরাইয়া সিদ্দিকা পরামর্শ দেন, "যেকোনো প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর আগে সিভি একাধিকবার প্রুফরিড করা উচিত।" প্রয়োজনে বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিন বা গ্রামারলির মতো টুল ব্যবহার করুন। সিভিতে ছবি যোগ করলে তা যেন পাসপোর্ট সাইজের ফরমাল ছবি হয়। সেলফি বা অনানুষ্ঠানিক ছবি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ব্যাকগ্রাউন্ড হালকা এবং পোশাক যেন করপোরেট প্রতিষ্ঠান উপযোগী হয়।