মশা একটি ক্ষুদ্র কীট। এর দেহ তিনটি অংশে বিভক্ত। তা হলো মাথা, বক্ষ ও উদর। মাথায় যৌগিক চোখ, স্পর্শক ও শুঁড় থাকে। স্ত্রী মশার শুঁড় ধারালো, যার সাহায্যে তারা মানুষের রক্ত শোষণ করে। পুরুষ মশা সাধারণত ফুলের রস খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা সাধারণত ভেজা ও অন্ধকার জায়গায় বাস করে এবং পানির জমে থাকা স্থানে ডিম পাড়ে। স্ত্রী মশার রক্তপানই ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া ইত্যাদি রোগের প্রধান বাহক হিসেবে পরিচিত। মশার আয়ুষ্কাল সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। সংক্ষেপে এই হলো মশার বিবরণী। কোরআনেও মশার কথা এসেছে।
মশা অত্যন্ত ক্ষুদ্র ও দুর্বল প্রাণী। অথচ এর মধ্যে আছে বিস্ময়কর জটিলতা। যেমন ডানা, রক্ত শোষণের যন্ত্র, জীবনচক্র ইত্যাদি। আল্লাহ বোঝাতে চেয়েছেন, তার সৃষ্টি যতই ছোট হোক, তাতে রয়েছে গভীর নিদর্শন। অহংকারী মানুষ অনেক সময় ভাবে, সে বড় ও শক্তিশালী। অথচ এক ছোট মশাই তাকে কষ্ট দিতে পারে, এমনকি রোগ ছড়িয়ে মৃত্যু ঘটাতে পারে। এর মাধ্যমে মানুষকে তার অসহায়ত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা মানুষকে বুঝাতে কোরআনে বিভিন্ন বিষয়ের উপমা দিয়েছেন। তিনি মশার মতো ক্ষুদ্র কিছুকেও দৃষ্টান্ত হিসেবে এনেছেন।
আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন, ‘হে লোকসকল! একটা দৃষ্টান্ত পেশ করা হচ্ছে, সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনো। আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ডাকো তারা কখনো একটা মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না, এজন্য তারা সবাই একত্র হলেও। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তারা তার থেকে তা উদ্ধারও করতে পারে না। প্রার্থনাকারী আর যার কাছে প্রার্থনা করা হয় উভয়েই দুর্বল।’ (সুরা হজ ৭৩)
কোরআনের অপর স্থানে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে তাদের দৃষ্টান্ত হলো মাকড়সার মতো। সে ঘর বানায়, আর ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই সবচেয়ে দুর্বল, যদি তারা জানত!’ (সুরা আনকাবুত ৪১)
তাফসিরুস সহিহে এসেছে, কাতাদা (রহ.) বলেন, আল্লাহ তার কিতাবে মাকড়সা ও মাছির উদাহরণ পেশ করার পর মুশরিকরা বলাবলি করল যে, মাকড়সা ও মাছি কি উল্লেখযোগ্য কিছু? তখন আল্লাহতায়ালা এই আয়াত নাজিল করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ মশা অথবা তার চেয়েও ক্ষুদ্র কোনো বস্তুর উদাহরণ দিতে লজ্জাবোধ করেন না। যারা ইমানদার তারা জানে যে, এ সত্য তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে এসেছে। কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তারা বলে যে, আল্লাহ কী উদ্দেশে এ উদাহরণ পেশ করেছেন? (আসল ব্যাপার হলো) তিনি এর দ্বারা অনেককেই বিভ্রান্ত করেন, আবার অনেককেই সৎপথে পরিচালিত করেন। বস্তুত তিনি ফাসেকদের ছাড়া আর কাউকেই বিভ্রান্ত করেন না।’ (সুরা বাকারা ২৬)
আবুল আলিয়া বলেন, মশার উদাহরণ দেওয়ার মধ্যে যৌক্তিকতা হলো, এ সমস্ত কাফের-মুশরিক ও মুনাফিকদের যখন আয়ু শেষ হয়ে যায় তখন তারা মশার মতো প্রাণীতে পরিণত হয়। কারণ মশা পেট ভরলে মরে যায়, আর যতক্ষণ ক্ষুধা থাকে ততক্ষণ বেঁচে থাকে। অনুরূপভাবে এ সমস্ত কাফের-মুশরিক ও মুনাফিক, যাদের জন্য উদাহরণ পেশ করা হয়েছে, তারাও দুনিয়ার জীবিকা শেষ করার পর আল্লাহ শক্ত হাতে তাদের পাকড়াও করবেন। (তাফসিরুস সহিহ)