ধ্রুব নিউজ ডেস্ক
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে জান্নাতের অফুরন্ত সুখ, প্রশান্তি ও অপরিসীম নেয়ামতরাজির বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে মানুষ পাবে চিরস্থায়ী ফলমূল, মাংস ও বিশুদ্ধ পানীয়ের সমাহার, যেখানে নেই কোনো ক্লান্তি, কষ্ট বা দুঃখের ছোঁয়া। তবে কুরআন ও তাফসিরের আলোকে জানা যায়, আল্লাহ তাঁর কিছু প্রিয় বান্দাকে দুনিয়াতেই এমন বিশেষ অলৌকিক রিজিক দান করেছিলেন, যা ছিল জান্নাতীয় খাবারের অনুরূপ।
এই অলৌকিক অনুগ্রহপ্রাপ্তদের মধ্যে সবচেয়ে মহীয়সী ব্যক্তিত্ব ছিলেন নবী ঈসা (আ.)-এর মা মরিয়ম (আলাইহাস সালাম)। মরিয়ম (আ.)-এর এই বিশেষ মর্যাদা কুরআনের বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। আল্লাহ বলেন, "যখনই জাকারিয়া (আ.) তার মেহরাবে প্রবেশ করতেন, তিনি মরিয়মের কাছে রিজিক দেখতে পেতেন। তিনি বলতেন, 'হে মরিয়ম! এগুলো তোমার কাছে কোথা থেকে আসে?' তিনি বলতেন, 'এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তাকে অগণিতভাবে রিজিক দান করেন।'" (সুরা আলে ইমরান: ৩৭)
তাফসির ইবনু কাসির ও অন্যান্য ব্যাখ্যাকাররা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, মরিয়ম (আ.)-এর কাছে এমন ফল ও খাবার আসত, যা দুনিয়ার নিয়মে পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন, শীতকালে গ্রীষ্মের ফল এবং গ্রীষ্মকালে শীতের ফল তাঁর কাছে উপস্থিত হতো। এই রিজিক কোনো মানুষের কাছ থেকে আসেনি, বরং এটি ছিল সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক বিশেষ অনুগ্রহ। কেউ কেউ এই রিজিককে জান্নাতের খাবারের অনুরূপ, বরকতময় ও অলৌকিক রিজিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনা মরিয়ম (আ.)-এর তাকওয়া, ইবাদত ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসার ফল ছিল, যার কারণে আল্লাহ তাঁকে দুনিয়াতেই জান্নাতীয় রিজিকের স্বাদ দিয়েছিলেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনেও এমন অলৌকিক বরকতময় রিজিকের বহু মু‘জিযা দেখা যায়। এই ঘটনাগুলো জান্নাতীয় খাবার না হলেও, আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় প্রেরিত অলৌকিক বরকতময় রিজিক—যা জান্নাতের অনুগ্রহেরই এক প্রতিফলন। সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, একবার খন্দকের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দোয়ার ফলে জাবির (রা.)-এর ঘরের সামান্য খাবার দিয়ে শত শত সাহাবি আহার করেছিলেন, অথচ খাবার শেষ হয়নি। আবার সহিহ মুসলিমে এসেছে, একবার তিনি অল্প পানি থেকে তাঁর হাতের বরকতে বহু মানুষকে পান করিয়েছিলেন, যেখানে পানি শেষ না হয়ে বরং বেড়েই চলেছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মরিয়ম (আ.)-এর মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন: "নারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মরিয়ম বিনতে ইমরান।" (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। এই শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ ছিল তাঁর ইবাদত, ধৈর্য এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা, যার ফলস্বরূপ তিনি এই অসাধারণ রিজিক লাভ করেছিলেন।
আমাদের জন্য এই ঘটনায় গভীর শিক্ষা ও বার্তা রয়েছে:
· আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তাকে বিশেষ অনুগ্রহে ভূষিত করেন।
· রিজিক শুধু বস্তুগত নয়, আধ্যাত্মিকও হতে পারে এবং আল্লাহ এমনভাবে দান করেন, যা মানুষের বোধের বাইরে।
· সৎ আমল, তাকওয়া ও ধৈর্য জান্নাতীয় দানের চাবিকাঠি।
· আল্লাহর দান সীমাহীন; তিনি চাইলে মানুষকে দুনিয়াতেই জান্নাতের স্বাদ অনুভব করাতে পারেন।