মাথায় পরতে হবে হেলমেট। তারপরই কী মন পড়তে পারবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), মন পড়া কি সহজ– এমন সব প্রশ্ন আসতেই পারে। মনের সব গোপন কুঠুরিতে জমা ভাবনা বুঝতে না পারলেও মাথায় সেই মুহূর্তে কী ভাবনা আসছে, তা ছোট ছোট বাক্যে বা শব্দে বুঝিয়ে দিতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এমনটাই দাবি করেছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
এমন এক ধরনের যন্ত্র আবিষ্কারের দাবি করেছেন তারা, যা মাথায় পরলেই নাকি মগজে কী চলছে, তা বোঝা যাবে। ইলন মাস্কের ব্রেইন চিপ থেকে যন্ত্রটি নাকি ঢের গুণে ভালো, তেমনই দাবি করেছেন সিডনির গবেষকরা। কারণ, মাস্কের যন্ত্র খুলি ফুটো করে মস্তিষ্কে প্রবেশ করাতে হয়,
আর আলোচিত যন্ত্রটি শুধু মাথায় পরে নিলেই কাজ হয়। যন্ত্রটি ১২৮টি ইলেকট্রোড বসানো বিশেষ টুপি, যার নাম ইলেকট্রো এনসেফ্যালো গ্রাম (ইইজি)।
বিশেষ ধরনের টুপির মধ্যে থাকবে সেন্সর ও রেকর্ডের যন্ত্র। মস্তিষ্কে স্নায়ুর মধ্যে যে ভাবনাচিন্তার তরঙ্গ প্রবাহিত হয়, তা রেকর্ড করবে যন্ত্রটি। তারপর ঠিক কম্পিউটার সফটওয়্যারের মতো তা ডিকোড করবে। অর্থাৎ তরঙ্গটি বিশ্লেষণ করে দেখবে, সেই মুহূর্তে ওই ব্যক্তি ঠিক কী কী ভাবছেন বা বলতে চাইছেন, তাঁর ভাবনার অর্থ বের করে তা ভাষায় লেখা হবে। অর্থাৎ ভাবনাচিন্তার তরঙ্গকে শব্দে রূপান্তর করা হবে। এই লেখালিখির কাজটি করবে আরও একটি যন্ত্র, যার নাম ‘ডি ওয়েব’।
যন্ত্রটিও এআই টুল, যার কাজ ভাবনার অতলে গিয়ে অর্থ খুঁজে বের করা। গল্প এখানেই শেষ নয়। ভাবনা পড়া, তার অর্থ বের করা ও শেষে গিয়ে ভাষায় লেখা– তিনটি কাজ পরিচালনার জন্য যন্ত্রের ভেতরে ‘ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ থাকবে। যে ভাষায় লেখা হবে, সেখানে যাতে ব্যাকরণ ত্রুটি না থাকে, তার জন্যই এমন ব্যবস্থা।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষক চার্লস ঝৌ যন্ত্রটি নিয়ে নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। হেলমেটটি পরিয়ে কে কী ভাবছেন, তা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া গেছে।
গবেষক ঝৌ বলেছেন, কারও যদি ক্ষুধা লাগে আর তিনি তা মুখে বলতে ব্যর্থ হন, তাহলে ওই মুহূর্তে তার মস্তিষ্কে যে সংকেত তৈরি হবে, তা ঠিকঠাক বোঝায় দক্ষতা দেখাবে যন্ত্রটি। জটিল কোনো চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা তার হয়নি এখনও। তবে ছোটখাটো ভাবনা, প্রতিক্রিয়ার ভাষাগত অর্থ ঠিকঠাক শনাক্ত করে।
সামনের ব্যক্তিটি ঠিক কী ভাবছেন, তা বুঝতে এমন যন্ত্রের প্রয়োগ হবে না। শুধু যে মন পড়ার জন্যই এমন যন্ত্র বানানো হয়েছে, তা কিন্তু নয়। ভবিষ্যতের চিকিৎসাবিজ্ঞানের বহুমাত্রিক কাজে একে ব্যবহার করা হবে। স্ট্রোক করে পঙ্গু হয়ে বাকশক্তি হারিয়েছেন এমন রোগী, অটিস্টিক শিশু যে মনের ভাব ব্যক্ত করতে পারছে না, তার চিকিৎসার কাজে যন্ত্রটি ব্যবহৃত হবে।
অন্যদিকে, যিনি জন্ম থেকে কথা বলতে পারেন না বা কোনো অসুখ বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে বাকশক্তি হারিয়েছেন, এমন কারও স্পিচ থেরাপির জন্য যন্ত্রটি প্রয়োগ হবে। আবার জিনগত জটিল রোগ, অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত অনেকের চিকিৎসায় এমন যন্ত্রের ব্যবহার হবে বলে জানান গবেষকরা। এমন গবেষণার কোনো সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। যন্ত্রটি কাজে কতটা নির্ভুল হতে পারে, তা অনেকের ওপর পরীক্ষায় সফল হলেই তবে এর সক্ষমতা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।