কেন বাড়ছে মোটরসাইকেলের আধিপত্য?

রাস্তায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা সাইকেলের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে — কারো কাছে এটি উপার্জনের উৎস, আবার কারো কাছে এটি জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর যখন ফাহিম তার নিজ শহর যশোর ছেড়েছিল, তখনও সাইকেল ছিল একটি সাধারণ দৃশ্য। তার মতো শিক্ষার্থী এবং সব বয়সের প্রাপ্তবয়স্করা দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য এর ওপর নির্ভর করত। এটি ছিল সাশ্রয়ী, রক্ষণাবেক্ষণে সহজ, এবং ছোট শহরের জীবনযাত্রার গতির সাথে বেশ মানানসই।

কিন্তু এই বছর ঈদে যখন সে ফিরে আসে, তখন সে একটি স্পষ্ট পরিবর্তন লক্ষ্য করে — রাস্তায় সাইকেল উল্লেখযোগ্যভাবে বিরল হয়ে গেছে। তাদের জায়গায়, এখন অটোরিকশা, ইজি বাইক এবং মোটরসাইকেলের আধিপত্য। এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও, যারা একসময় প্রধানত সাইকেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তারা ক্রমবর্ধমান হারে ইজি বাইক বেছে নিচ্ছিল, যা মাত্র ১০ টাকায় বেশ কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে।

কৌতূহলবশত, ফাহিম কয়েকটি সাইকেলের দোকানে থামে এবং কিছু স্থানীয় মেকানিকের সাথে কথা বলে।

"হ্যাঁ, যশোরের মতো শহরে সাইকেলের ব্যবহার কমে যাচ্ছে," তাদের একজন তাকে বলেন। "কয়েকজন স্কুলছাত্র এখনও এটি ব্যবহার করে, তবে এর বেশি নয়। ক্লাস নাইন বা টেন-এ পৌঁছানোর পর, কলেজে ভর্তির অনেক আগেই, তাদের অনেকেই তাদের পিতামাতাকে মোটরসাইকেল কিনে দিতে বাধ্য করে।"

দেশজুড়ে চিত্র

এটি শুধু একটি স্থানীয় ঘটনা ছিল না। ফাহিমের পর্যবেক্ষণ সারাদেশে একটি বৃহত্তর পরিবর্তনের প্রতিধ্বনি ছিল। ২০১৩-২০১৪ সাল থেকে সাইকেল থেকে মোটরসাইকেলে এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে কিন্তু দৃঢ়ভাবে গড়ে উঠছিল, যখন বাংলাদেশে মোটরসাইকেল সংযোজন শুরু হয়।

ব্র্যান্ডগুলো সেমি নকড-ডাউন (SKD) এবং কমপ্লিট নকড-ডাউন (CKD) ফরম্যাটে বাইক উৎপাদন শুরু করে, যার ফলে দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। স্থানীয় উৎপাদন কেন্দ্রগুলির সম্প্রসারণের সাথে মিলিত হয়ে, এটি মোটরসাইকেলকে এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের নাগালের মধ্যেও নিয়ে আসে।

তবে, সাইকেল, মোটরসাইকেলের চেয়ে অনেক সস্তা হওয়া সত্ত্বেও, প্রায়শই কিছু 'লুকানো খরচ'-এর সাথে আসে — যার মধ্যে প্রধান হলো নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার অভাব। ছোট শহরে সাইকেল চালানো এখনও তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে মনে করা হলেও, শহরে তা এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। এখানে জীবনের গতি দ্রুত, এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট লেন নেই, নেই রাখার পর্যাপ্ত জায়গা। চুরি ও দুর্ঘটনার শঙ্কা অনেক বেশি।

হারানো অনুভূতি

ফাহিম স্মরণ করে বলেন, "আমি জীবনের বেশ দেরিতে সাইকেল চালাতে শিখেছি। কিন্তু যখন আমি শিখেছি, তখন সত্যি বলতে আমার মনে হয়েছিল আমি উড়ছি। এই অনুভূতি প্রতিদিন আসে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই ধরণের আনন্দকে পুনরুৎপাদন করা খুবই কঠিন।"

তিনি শুধুমাত্র রোমাঞ্চের জন্য নয়, বরং সুস্থ থাকার একটি উপায় হিসেবেও সাইকেল চালানো শুরু করেছিলেন — এমন কিছু যা সক্রিয় কিন্তু একঘেয়ে নয়।

ফাহিমকে পেরিয়ে কয়েকটি হালকা রঙের ই-স্কুটার দ্রুত চলে যেতে দেখা যায় — একটি শহরে যেখানে একসময় সাইকেলের ঘণ্টার শব্দ শোনা যেত, সেখানে এগুলি নীরব, ভবিষ্যতের এক ঝলক।