এলো যে বর্ষা আপনার হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখা খুবই জরুরি, কারণ এটি প্রতিনিয়ত আমাদের শরীরে রক্ত পাম্প করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং কায়িক শ্রমের অভাব আমাদের হৃৎপিণ্ডকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। হৃদরোগের কারণ, লক্ষণ এবং সুস্থ হার্টের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মবিধি নিয়ে আলোচনা ।
হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। এটি প্রতি মিনিটে ৫-৬ লিটার রক্ত পাম্প করে সমস্ত শরীরে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। কিন্তু যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততায় আমরা প্রায়ই এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির দিকে খেয়াল রাখতে পারি না, যার ফলস্বরূপ বিভিন্ন হৃদরোগ দেখা দেয়।
হার্ট নিয়ে এত ভাবনা কেন?
হৃৎপিণ্ড বিরামহীনভাবে কাজ করলেও, যেকোনো সময় এর ছন্দপতন হতে পারে। অসচেতনতা, অযত্ন আর অবহেলায় রক্তনালিতে ধীরে ধীরে চর্বি জমতে শুরু করে। বার্ধক্যে পৌঁছালে ধমনির গাত্র ক্যালসিয়াম এবং রক্তকণিকার জমাট উপাদানে ভরে ওঠে। হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিগুলো, যাদের করোনারি আর্টারি বলা হয়, তারা মাংসপেশিতে নিরবচ্ছিন্ন রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। দীর্ঘক্ষণ অক্সিজেনের অভাবে এই পেশিগুলো একসময় অকেজো হয়ে পড়ে। হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিগুলো নিস্তেজ হওয়ার আগেই অক্সিজেনের অভাবে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা আমরা হার্টের এনজিনার ব্যথা বলি। এই ধরনের ব্যথা হলো মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব সংকেত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে দিন দিন হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
হৃদরোগের কারণ ও জটিলতা
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৬৫ বা তার ঊর্ধ্বের মানুষের করোনারি হৃদরোগের কারণে মৃত্যু ঘটে। তবে ছেলেরা ৪৫ বছর এবং মেয়েরা ৫৫ বছর বয়স থেকেই এই ধরনের মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে থাকে, যদি সচেতন না হয়। শুধু রক্তনালির জমাটবদ্ধতাই নয়, উচ্চ রক্তচাপের কারণেও হৃৎপিণ্ড দুর্বল হতে পারে।
হৃদরোগের মূল কারণগুলো হলো:
· দুশ্চিন্তা
· ধূমপান
· মদ্যপান
· আয়েশি জীবনযাপন (কায়িক শ্রমের অভাব)
· ডায়াবেটিস
· কিডনির রোগ
· পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস
অনেক সময় জন্মগত হৃদরোগের কারণেও হার্ট ফেইলিউর হতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে জিনগত কারণে হৃদপেশি দুর্বল হয়ে পড়লেও হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।
রোগের লক্ষণ
রক্ত জমাটবদ্ধতাজনিত এনজিনার কারণে যে বুকের ব্যথা হয়, তার একটি নির্দিষ্ট ধরন রয়েছে:
· সাধারণত এই ব্যথা বুকের মাঝখানে হাড়ের পেছনে অনুভূত হয়।
· রোগী ঘর্মাক্ত হয়ে ওঠে।
· ব্যথা অনেক ক্ষেত্রে বাম হাতের ভেতরের দিক বরাবর নেমে আসতে পারে।
· হাঁটাহাঁটি করলে, বিশেষ করে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে, এই ব্যথা আরও তীব্র হয়।
· যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, তাদের কোনো এক পর্যায়ে বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
· এছাড়া, অনেক রোগীর মাথা ও ঘাড়ে ব্যথার সমস্যা দেখা যায়।
· কিডনির সমস্যা থাকলে মুখ ফুলে যেতে পারে।
· হৃদরোগ জটিল আকার ধারণ করলে হার্ট ফেইলিউর হয়ে হাত-পা ও পেটে পানি আসতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ শুধু হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করে না, এটি ব্রেইন স্ট্রোক, এমনকি কিডনি ফেইলিউরেরও কারণ হতে পারে। মানসিক দুশ্চিন্তাও রোগের জন্য দায়ী। হঠাৎ কোনো সংবাদ শুনে বা ভয় পেয়ে তাৎক্ষণিক উত্তেজিত হওয়া উচিত নয়, কারণ হঠাৎ ভয় বা দুশ্চিন্তা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হতে পারে।
হার্ট সুস্থ রাখার নিয়মবিধি
হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলা জরুরি:
· লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার: খাবারে বাড়তি লবণ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
· মাদক ও তামাকজাতীয় দ্রব্য পরিহার: ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দিন।
· পারিবারিক ইতিহাস থাকলে স্ক্রিনিং: হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অল্প বয়স থেকেই নিয়মিত স্ক্রিনিং করান।
· মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ কমে বা মনে প্রফুল্লতা আসে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন, যেমন—ব্যায়াম, মেডিটেশন বা পছন্দের কাজ করা।
· নিয়মিত ওষুধ সেবন: উচ্চ রক্তচাপ বা করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
· অন্যান্য রোগের চিকিৎসা: শরীরে হৃদরোগ ছাড়াও অন্য কোনো সমস্যা, যেমন—ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ফুসফুসের রোগ থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ করুন।
আপনার হার্ট সুস্থ রাখতে এই নিয়মগুলো মেনে চলুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না।