❒ ভারত
ধ্রুব নিউজ ডেস্ক
ভারতের পুনের ঐতিহ্যবাহী দুর্গ ‘শনিবার ওয়াড়া’-তে তিন নারী নামাজ পড়ায় চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় বিজেপি সাংসদ মেধা কুলকার্নি নিজে উপস্থিত থেকে গোমূত্র (গরুর প্রস্রাব) দিয়ে দুর্গটি ‘শুদ্ধ’ করেন। তাঁর এ কর্মকাণ্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ।ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনেতে অবস্থিত ঐতিহাসিক দুর্গ ‘শনিবার ওয়াড়া’ মারাঠা সাম্রাজ্যের গৌরবময় প্রতীক হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি দুর্গে তিন নারী নামাজ আদায় করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারীরা দুর্গ প্রাঙ্গণে চাদর বিছিয়ে নামাজ আদায় করছেন।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরই বিজেপির সাংসদ মেধা কুলকার্নি কয়েকটি হিন্দু সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গোমূত্র ছিটিয়ে স্থানটি ‘শুদ্ধ’ করেন এবং শিববন্দনা করেন। কুলকার্নি বলেন, “শনিবার ওয়াড়া আমাদের গর্ব—এটি নামাজ পড়ার স্থান নয়। এই কাজটি প্রত্যেক পুনেবাসীর অনুভূতিতে আঘাত করেছে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা জায়গাটি শুদ্ধ করেছি, শিববন্দনা করেছি। গেরুয়া পতাকা ওড়ানোর চেষ্টা করলেও অনুমতি পাইনি। এভাবে নামাজ পড়তে দিতে থাকলে একদিন তারা এটিকেও ওয়াকফ সম্পত্তি দাবি করবে। এখন হিন্দু সমাজ সতর্ক।”
দুর্গে নামাজ পড়ার ঘটনায় মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নিতেশ রানে বলেন, “শনিবার ওয়াড়া হিন্দু ঐতিহ্যের প্রতীক। মুসলমানরা যেমন মসজিদে নামাজ পড়েন, তেমনি হিন্দুদেরও তাদের ধর্মীয় স্থান আছে। কেউ যদি হাজি আলী দরগায় গিয়ে হনুমান চালিসা পাঠ শুরু করে, তাহলে কি মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত লাগবে না?”
অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদের এই ‘শুদ্ধিকরণ’ কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এনসিপির মুখপাত্র রূপালী পাটিল থোমব্রে অভিযোগ করেছেন—“মেধা কুলকার্নি ইচ্ছে করেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন।” তিনি পুলিশের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার আবেদন জানিয়েছেন।
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর মুখপাত্র ওয়ারিশ পাঠান বলেন, “তিন-চারজন নারী কয়েক মিনিট নামাজ পড়েছেন, এতে এত সমস্যা কোথায়? সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার দিয়েছে। বিজেপি শুধু ঘৃণা ছড়াচ্ছে। প্রকৃত শুদ্ধিকরণ দরকার তাদের মন ও চিন্তায়।”
এদিকে, ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, দুর্গে ধর্মীয় প্রার্থনা করার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট নারীদের বিরুদ্ধে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) কর্মকর্তার পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। দুর্গ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।