মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

মানবাধিকার মিশনের কাজ কী, ঢাকায় দপ্তর স্থাপনে আপত্তি কেন

ধ্রুব নিউজ ডেস্ক ধ্রুব নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২২ জুলাই,২০২৫, ১১:০৭ এ এম
মানবাধিকার মিশনের কাজ কী, ঢাকায় দপ্তর স্থাপনে আপত্তি কেন

তিন বছরের সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী দেশে স্থাপন হবে মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর। পৃথক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সমঝোতার বিষয়টি জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং। দেশে এই মিশনের কাজ, স্থাপনের প্রেক্ষাপট, কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আপত্তির কারণ এবং সরকারের ব্যাখ্যা কী- তা থাকছে এই প্রতিবেদনে।

মিশনের কাজ
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) হলো জাতিসংঘ সচিবালয়ের একটি বিভাগ। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ আছে, আওতাভুক্ত দেশগুলোর সরকারকে মানবাধিকার বিষয়ক বাধ্যবাধকতা পূরণে সহায়তা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে আওয়াজ তোলা, চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত এবং প্রতিকারের উপায় খুঁজে বের করাই মিশনের কাজ। আরও বলা হয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী আমাদের উপস্থিতির মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করি যে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড বাস্তব পর্যায়ে কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে।’ 

অনুদান ও গৃহযুদ্ধ
সংস্থাটিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ অনুদান দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে ওএইচসিএইচআরের স্বেচ্ছা অনুদানের তালিকা অনুযায়ী, ৩৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে দেশটি। এরপরে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে ও যুক্তরাজ্য। 

রয়টার্সে গত ২৩ জুন ‘কঙ্গোতে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্তে জাতিসংঘের কার্যক্রম অর্থসংকটে স্থগিত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ওএইচসিএইচআর এর অর্থসংকটের কারণে কঙ্গোতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্তে নিয়োজিত একটি কমিশন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে না। এর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্যে বড় ধরনের কাটছাঁটের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। একই কারণে ওএইচসিএইচআর এর স্বেচ্ছা অনুদান এ বছর (২০২৫) ৬০ মিলিয়ন ডলার কমে গেছে বলেও আরেক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। যা সংস্থাটির গত বছরের মোট আয়ের প্রায় ১৪ শতাংশ।

বর্তমানে ১৬টি দেশে ও দুটি স্বতন্ত্র কার্যালয় আছে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের। তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক বা গৃহযুদ্ধ চলমান ও সংঘটিত হয়েছে এমন রাষ্ট্রও আছে। যেমন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, সুদান, ইয়েমেন, মেক্সিকো, বুরকিনা ফসো। এ ছাড়া, আরব বসন্ত হওয়া তিউনিশিয়াতেও সংস্থাটির দপ্তর আছে। অন্যদেশগুলো হলো, কম্বোডিয়া, চাঁদ, কলম্বিয়া, গুয়েতেমালা, গায়ানা, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া ও নাইজার।

তথ্য ফাঁসের বিতর্ক
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর ২০২১ সালের জানুয়ারির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওএইচসিএইচআর এর বিরুদ্ধে সে সময় গোপন তথ্য বিনিময়ের অভিযোগ ওঠে। এমা রেইলি নামে সংস্থাটিরই এক কর্মী অভিযোগ তোলেন, দপ্তর থেকে চীনের প্রশাসনের কাছে সরকার বিরোধীদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিরোধীদের মধ্যে উইঘুর অধিকারকর্মী, তিব্বতীয় এবং হংকংয়ের নাগরিকরাও ছিলেন। যারা মানবাধিকার বিষয়ক প্যানেল আলোচনায়, সম্মেলনে এবং উন্মুক্ত অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন। যদিও তখন এই অভিযোগ অস্বীকার করে ওএইচসিএইচআর।

বাংলাদেশে আপত্তির কারণ
ঢাকায় মানবাধিকার বিষয়ক মিশন স্থাপনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। মিশন স্থাপনের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে বিক্ষোভও করেছে ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। ওই বিক্ষোভ সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমদ মিশন স্থাপনের প্রেক্ষাপট সংক্রান্ত নিজস্ব মত তুলে ধরেন। বলেন, ‘কিছুদিন আগেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, দেশে কোনো জঙ্গি নেই। যখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি হয়েছে, তখনই দেশে নতুন করে জঙ্গি নাটকের অবতারণা হচ্ছে।’

একই দিন (১৮ জুলাই) মিশন স্থাপনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন থেকে সরকারকে সরে আসতে বাধ্য করা হবে।’

এর আগে ১১ জুলাই এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিশন স্থাপনের উদ্দেশ্য নিয়ে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার বাস্তবে ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থি পশ্চিমা আদর্শের হাতিয়ার। খাল কেটে কুমির আনার অধিকার সরকারকে কেউ দেয়নি।’

এ ছাড়া, ৬ জুলাই জার্মান সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘কোনো একটি দেশ যদি দীর্ঘ মেয়াদে সংকটে পড়ে যায় তাহলে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশ তো এমন কোনো দীর্ঘ মেয়াদে সংকটে পড়ে নাই যে তাদের অফিস লাগবে।’ রুহিন হোসেন আরও বলেন, ‘জাতিসংঘ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পেরেছে এমন কোনো প্রমাণ নাই। তারা সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদীর স্বার্থরক্ষা করছে। মানুষের মধ্যে এই শঙ্কাই আছে। তারা মানবাধিকার নয়, ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে আসতে চায় কী না সেটাই এখন প্রশ্ন।’ 

সরকার যা বলছে
মিশন স্থাপন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আজ শনিবার দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আপত্তির বিষয়টি উল্লেখ আছে। এতে বলা হয়েছে, ওএইচসিএইচআর এর মিশনটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও মোকাবিলার মধ্যে কেন্দ্রীভূত থাকবে, বিশেষ করে আগের সরকারের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য। এই মিশনের কাজ হবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত আইন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে কোনো সামাজিক এজেন্ডা প্রচার না করে শুধু মানবাধিকার রক্ষা ও সুরক্ষায় সহায়তা দেওয়া।

যদি কখনো মনে হয়, এই অংশীদারত্ব আর জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তাহলে সরকার সমঝোতা থেকে বের হয়ে আসার অধিকার রাখে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ আছে।

 

ধ্রুব নিউজের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

💬 Comments

Login | Register
Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)