ধ্রুব নিউজ ডেস্ক
বর্ষাকালে ত্বক আর্দ্রতা ও গরমের কারণে চিটচিটে হয়ে থাকে, এবং ত্বক শুষ্ক হওয়ার পাশাপাশি ব্রণ, ফুসকুড়ি ও সংক্রমণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সময়ে ত্বকের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন, আর ফল হতে পারে এর এক প্রাকৃতিক সমাধান। ফল শুধু শরীরকে পুষ্টি জোগায় না, ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করে। জেনে নিই ফল দিয়ে ঘরে বসেই ত্বকের পরিচর্যার কিছু দারুণ টিপস
আম:
আম ফেসপ্যাক হিসেবে দারুণ কাজ করে। এটি ত্বক উজ্জ্বল করে, মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখে।
· উজ্জ্বলতা ও আর্দ্রতার জন্য ফেসপ্যাক: এক টুকরো পাকা আম চটকে নিন। এতে এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ দুধ মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকে তাৎক্ষণিক উজ্জ্বলতা আনবে।
· ত্বকের মরা কোষ দূর করতে স্ক্রাব: আমের পাল্পে পরিমাণমতো চালের গুঁড়া বা চিনি মিশিয়ে আলতো হাতে মুখে হালকাভাবে ঘষে স্ক্রাব করুন। ৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ত্বকের মরা কোষ দূর হবে এবং ত্বক মসৃণ হবে।
জাম:
জাম শুধু সুস্বাদুই নয়, রূপচর্চাতেও খুব উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং ট্যানিন ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
· ব্রণ ও দাগ কমাতে: কয়েকটি পাকা জাম চটকে রস বের করে নিন। এর সঙ্গে এক চা চামচ বেসন বা মুলতানি মাটি মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
· তৈলাক্ত ত্বক নিয়ন্ত্রণে: জামের রসের সঙ্গে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব অনেকটাই কমে যাবে। সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে প্যাচ টেস্ট করে নিতে ভুলবেন না।
· ত্বক টানটান ও উজ্জ্বল করতে: জামের রসের সঙ্গে দই ও সামান্য মধু মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। মুখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। জামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
লিচু:
লিচুতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে এবং উজ্জ্বলতা আনে।
· দাগ-ছোপ ও উজ্জ্বলতার জন্য: ৩-৪টি পাকা লিচুর পাল্প নিয়ে (বিচি বাদ দিয়ে) এতে এক চা চামচ মধু মেশান। এটি মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি রোদে পোড়া দাগ কমাতে ও ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করবে।
· ব্রণ প্রতিরোধে: লিচুর রসের সঙ্গে সামান্য গোলাপজল ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে কটন প্যাড দিয়ে ব্রণের জায়গায় লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ব্রণের প্রদাহ কমবে।
· বয়সের ছাপ রোধে: লিচুর পাল্প, দই, এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানান। মুখে লাগিয়ে শুকানো পর্যন্ত রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের অ্যান্টি-এজিং এবং বলিরেখা দূর করতে সহায়ক।
· ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে: লিচু চটকে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে শুকনো ত্বকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে কোমল ও মসৃণ রাখবে।
জামরুল:
জামরুলে প্রচুর পানি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বককে হাইড্রেট ও সতেজ রাখে।
· হাইড্রেটেড ত্বক ও সতেজতার জন্য: জামরুল ধুয়ে ব্লেন্ড করে রস বের করুন। এই রস কটন প্যাডে ভিজিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে হাইড্রেটেড ও নরম রাখবে।
· তৈলাক্ত ত্বকের জন্য টোনার: জামরুলের রস এবং গোলাপজল মিশিয়ে একটি বোতলে সংরক্ষণ করুন। দিনে দু’বার টোনার হিসেবে এটি ব্যবহার করলে তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
· ব্রণ ও র্যাশ কমাতে: জামরুলের রসে এক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্রণের ওপর লাগান। ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ব্রণের প্রদাহ কমতে সহায়তা করবে।
· ত্বকের উজ্জ্বলতা ও কালো দাগ কমাতে: জামরুল চটকে এর পাল্পের সঙ্গে সামান্য লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানান। ত্বকে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি রোদে পোড়া ভাব কমাতে এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
কাঁঠাল:
কাঁঠালের রস মুখের ব্রণ দূর করতে এবং চোখের নিচের কালো দাগ কমাতে সহায়ক।
· বলিরেখা দূর করতে: ২ টেবিল চামচ কাঁঠালের বীজ বাটা, ১ টেবিল চামচ দুধ, এবং ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। ১৫-২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দু’দিন এটি ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
এই ফলভিত্তিক ফেসপ্যাকগুলো ব্যবহার করে আপনি বর্ষাকালেও আপনার ত্বককে সতেজ, উজ্জ্বল এবং সমস্যা মুক্ত রাখতে পারবেন। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী কোন ফলটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপকারী মনে হচ্ছে?