সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর নেতানিয়াহুর ভবিষ্যৎ

সাইমন স্পিকম্যান কর্ডাল সাইমন স্পিকম্যান কর্ডাল
প্রকাশ : শনিবার, ১১ অক্টোবর,২০২৫, ০৪:১৩ পিএম
গাজায় যুদ্ধবিরতির পর নেতানিয়াহুর  ভবিষ্যৎ

এটা কতদিন চলবে তা ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করে। তিনি দেখিয়েছেন যে  নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত, কারণ তিনি নতুন নিয়ম দিয়ে নিজের খেলার নিয়ম তৈরি করেন।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি সমাজে প্রায় একই রকম আনন্দের প্রকাশ দেখা গেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় যারা বন্দী হয়েছিলেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা চুক্তি ঘোষণার পর তেল আবিবে উল্লাস করেছেন।

তবে গাজায় দুই বছরের যুদ্ধ ইসরায়েলি সমাজে ফাটল ধরিয়েছে। গাজায় গণহত্যার বিরোধিতাকারী ইসরায়েলিরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন এবং তারা এক প্রকার সমাজচ্যুত। অন্যদিকে, এই যুদ্ধকে সমর্থনকারীরা ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান নিন্দার ঝড় উঠায় বেশ ক্ষুব্ধ।

বার্লিন থেকে ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিম্রোড ফ্ল্যাশেনবার্গ বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির খবরটা পাওয়ার পর আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। এটা সত্যিই বিশাল ঘটনা। এটা ইসরায়েলজুড়ে এমন এক আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে, যেন মানুষ চাপমুক্ত হচ্ছে। এটা বিশাল এক স্বস্তি।’

কারও কারও কাছে যুদ্ধবিরতির খবরটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। অনেকের উদ্বেগ চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত ভেঙে যেতে পারে, যেমনটা এই বছরের শুরুতে একটি চুক্তি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। বামপন্থী হাদাশ-তা'আল পার্টির সংসদ সদস্য আইদা তোউমা-সুলেইমান বলেন, ‘সবাই খুশি। দুই বছর ধরে আমরা এর জন্যই আহ্বান জানাচ্ছিলাম। আমি গাজার ভিডিও দেখছি, তেল আবিবের টেলিভিশনগুলিতে জিম্মিদের পরিবারদের দেখছি, সবাই খুশি।’

তবে তিনি সতর্ক করে যোগ করেন, ‘এখনও সতর্কতা আছে। এমন একটা অনুভূতি কাজ করছে যে কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও আবার যুদ্ধে ফিরে যাওয়ার অজুহাত খুঁজে নেবে। মানুষ এই সরকারকে বিশ্বাস করে না—শুধু গাজায় নয়, ইসরায়েলেও নয়।’

এই সন্দেহের একটি বড় অংশ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ঘিরে। তিনি এর আগে বারবার যুদ্ধ শেষ করার আহ্বানে প্রতিরোধ করেছেন। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং বন্দীদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল যে তিনি নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে—তার জোট ধরে রাখার জন্য—সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এমনটা ইঙ্গিত করেছিলেন।

আজকের এই যুদ্ধবিরতি সেই সন্দেহ দূর করতে পারেনি। নেতানিয়াহু এখনও তার দীর্ঘদিনের দুর্নীতি মামলার রায়, ৭ অক্টোবরের হামলার আগে তার ব্যর্থতা নিয়ে তদন্ত, পাশাপাশি তার সরকারি জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ অতি-অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের সামরিক নিয়োগের বিতর্ক—এই সবকিছুর মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। গাজায় যুদ্ধ চলার সময় এই ইস্যুগুলো পেছনে পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।

তবে, আগামী বছরের মধ্যে বা তার আগেও নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা থাকায়, নেতানিয়াহু তার কিছু সাফল্য তুলে ধরতে পারেন, বিশেষত বৃহত্তর অঞ্চলে ইরান-সমর্থিত  ‘প্রতিরোধী শক্তিকে’ দুর্বল করার ক্ষেত্রে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো গত জুনে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ এবং গত বছর লেবাননের হেজবুল্লাহ গোষ্ঠীর নেতৃত্বের বড় অংশকে নির্মূল করা।

নেতানিয়াহুর সাবেক সহকারী ও রাজনৈতিক জরিপকারী মিচেল বারাক আল জাজিরাকে পশ্চিম জেরুজালেম থেকে বলেন, ‘নেতানিয়াহু এটাকে বিজয় হিসেবে তুলে ধরবেন। তিনি বলতে পারবেন যে যুদ্ধের শুরুতে তিনি যা যা চেয়েছিলেন, তার সবকিছুই অর্জন করেছেন। তিনি বন্দীদের ফিরিয়ে এনেছেন, হামাসকে ধ্বংস করেছেন। এর পাশাপাশি, তিনি দাবি করবেন যে এই সুযোগ ব্যবহার করে তিনি হেজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করেছেন, ইরানকে দুর্বল করেছেন এবং সিরিয়ার শাসনের পতন দেখেছেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যকে পুনর্গঠিত করেছেন এবং ইসরায়েলের মুখোমুখি প্রধান হুমকিগুলোর প্রায় সবকটিই সরিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করবেন।’

নেতানিয়াহুর উগ্র ডানপন্থী জোটের অন্যরা অবশ্য এই চুক্তির বিরোধিতা করতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির যুদ্ধবিরতির প্রতি বৈরী মনোভাব দেখিয়েছেন এবং সরকার থেকে বেরিয়ে যাবেন বলে দিয়েছেন। তবে, বিরোধী দল চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য সরকারকে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় ডানপন্থীরা চুক্তিবিরোধী অবস্থান কতটা ধরে রাখতে পারবেন তা স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলি জনতা নেতানিয়াহুকে কতটা কৃতিত্ব দেবে, নাকি ট্রাম্পকে, তা স্পষ্ট নয়। গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের আন্তর্জাতিক সমালোচনার মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র ছিল। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্টের এই সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রই মূলত গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং অঞ্চল জুড়ে তার হামলাগুলোর অর্থায়ন করেছে।

তবে, অনেক ইসরায়েলি মনে করেন কাতারে হামাস নেতাদের উপর ইসরায়েলের ব্যর্থ হামলা এবং আরব রাষ্ট্রগুলির ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া মার্কিন প্রশাসনের অগ্রাধিকারকে পরিবর্তন করেছে এবং শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে চুক্তিতে সম্মত হতে ও যুদ্ধ শেষ করার কথা বলতে বাধ্য করেছে।

ফ্ল্যাশেনবার্গ বলেন, ‘আমি মনে করি ট্রাম্প, তুরস্ক ও কাতারের মতো মুসলিম ও আরব রাষ্ট্রগুলোর জোটের সাথে মিলে সম্ভবত ইসরায়েলি সরকারকে বাধ্য করতে সফল হয়েছেন। এটা আরও আগেই অর্জন করা যেত, যা থেকে বোঝা যায় ট্রাম্পই এটি চাপিয়ে দিয়েছেন।’

তোউমা-সুলেইমান এই শিথিলভাবে লিখিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় নিয়ে বলেন, ‘নেতানিয়াহুকে প্রথম পর্যায়টি শেষ করতে হবে। আমরা সেটা জানি, তবে দ্বিতীয় পর্যায় সম্পর্কে আমাদের এখনও অনেক কিছু অজানা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেটা এখনও আলোচনার বিষয়—এবং ইসরায়েলের পক্ষে, সেই আলোচনা এমন একটি সরকার দ্বারা পরিচালিত হবে যা সম্ভবত আবার যুদ্ধ শুরু করতে চাইছে।’

তবে, যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনারকে পাঠানো একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের (যিনি কী না এই প্রক্রিয়ার সাথে গভীরভাবে জড়িত) বিরুদ্ধে পুনরায় বিরোধে যাওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা কঠিন হবে।

বারাক বলেন, ‘এটা কতদিন চলবে তা ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করে। তিনি দেখিয়েছেন যে  নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত, কারণ তিনি নতুন নিয়ম দিয়ে নিজের খেলার নিয়ম তৈরি করেন।’

বারাক আরও বলেন, ‘ইসরায়েল সবসময় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। কিন্তু ট্রাম্প বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এমনকি সাধারণভাবে বিদেশী মিত্রদের নিয়ে চিন্তা করেন কিনা তা আর স্পষ্ট নয়। তিনি শান্তি চান, আর নেতানিয়াহু তা জানেন। তিনি জানেন যে ট্রাম্প সত্যিই তাকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন—এবং সেটা হবে একটি বিপর্যয়।’

·         সাইমন স্পিকম্যান কর্ডাল তিউনিসিয়ার সাংবাদিক ও আলজাজিরার কলামলেখক

ধ্রুব নিউজের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

💬 Comments

Login | Register
Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)