মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

হাজার কোটি ডলারের কালো চুলের ব্যবসা

ধ্রুব নিউজ ডেস্ক ধ্রুব নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : রবিবার, ২০ জুলাই,২০২৫, ০২:০৫ পিএম
হাজার কোটি ডলারের কালো চুলের ব্যবসা


পূর্ব লন্ডনের নিরীহদর্শন কিছু দোকান, যেগুলো বেশির ভাগ পথচারীই খেয়াল করেন না। যেমন ব্যস্ত হাই স্ট্রিটের মানি ট্রান্সফার শপের পাশে কিংবা ব্রুকলিনের সেকেলে ধাঁচের কোনো বাড়ি। বাড়িগুলোর ভেতর থেকে ভেসে আসে মৃদু সংগীত আর সালফার-গোলাপি হেয়ার লোশনের মিশ্রিত গন্ধ। বাড়িগুলোর সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে এক কর্মব্যস্ত জগৎ। যেখানে নারীরা অবিশ্বাস্য গতিতে জটিল বুননের চুল তৈরি করছেন।

এফটির প্রতিবেদন অনুসারে, কর্মব্যস্ত এ নারীদের সেলুনগুলো স্রেফ বিউটি পার্লার নয়, এক ধরনের নিরাপদ আশ্রয়। এ নির্ভরতা নিয়ে গড়ে উঠেছে এক বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক। পেছনের দরজার কালো চুল পরিচর্যার এই ছোট ব্যবসার সম্মিলিত বাজারমূল্য ২০২৩ সালে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, কালো চুলের এ ব্যবসার আকার ২০৩৩ সালের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তবে এর প্রকৃত বাজারমূল্য আরো বড় বলে মন্তব্য অনেক বিশ্লেষকদের। শুধু যুক্তরাজ্য নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোট হেয়ার কেয়ার ব্যয়ের ১০ শতাংশের বেশি ব্যয় করেন কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা। যদিও তারা দেশটির নারী জনসংখ্যার মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কালো চুলের পেছনে ব্যয় বেশি হওয়ার পেছনে রয়েছে সমাজ ও সংস্কৃতির চাপ, যেখানে আফ্রো ধাঁচের চুলকে দীর্ঘদিন ধরে সৌন্দর্য বা পেশাদারত্বের মূলধারার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়নি।

বিদ্যালয় ও কর্মস্থলে চুল নিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ করে দ্য হ্যালো কালেকটিভ। সংস্থাটির সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টেফানি কোহেন বলেন, অনেকেই বোঝেন না যে এর মধ্যে একটা সূক্ষ্ম প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য আছে। এটা সরাসরি না হলেও কাঠামোগত বিদ্বেষ।

২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের শীর্ষ করপোরেটদের মধ্যে এক জরিপে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক চুলের স্টাইলকে কর্মক্ষেত্রে কম গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি একজন কালো নারী চুল সোজা করেন, তাহলে তাকে কাজে নিয়োগের ‘উপযুক্ত’ মনে করার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। এ ধরনের নীরব নিয়ন্ত্রণমূলক পরিস্থিতির মধ্যেই গড়ে উঠেছে এক নতুন ইকোসিস্টেম। অনেকের কাছে কৃষ্ণ চুলকেন্দ্রিক এ সেলুনগুলো এখন বিলাসবহুল পরিষেবার কেন্দ্রও।

যুক্তরাজ্যে জন্ম নেয়া লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক হেয়ারড্রেসার ভারনন ফ্রঁসোয়া বলেন, ‘লন্ডনে খুব কম হেয়ারড্রেসার আছে, যারা আফ্রিকান ধাঁচের চুলকে পূর্ণাঙ্গভাবে বিলাসবহুল বিউটি স্পেসে সেবা দিতে পারে। যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল ও সবচেয়ে ভালো সেবা চান, তাদের জন্য আমি এ ঘাটতি পূরণের মিশনে নেমেছিলাম।’

এ অভিজ্ঞতার সঙ্গে সুর মেলান চার্লট মেনসাহ। ব্রিটিশ-ঘানাইয়ান হেয়ারস্টাইলিস্ট ও ব্রিটিশ হেয়ারড্রেসিং অ্যাওয়ার্ডস হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত প্রথম এ কৃষ্ণাঙ্গ নারী বলেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা সুন্দর প্যাকেজিং, বিলাসবহুল সুগন্ধি আর স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য কার্যকরী ফর্মুলা চেয়েছিলেন। তারা সম্মান পেতে চেয়েছিলেন।’

তার মতে, বিলাসবহুল আফ্রো হেয়ার প্রডাক্ট এখন বড় বড় দোকানে আসায় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে।

কার্লি হেয়ার প্রডাক্ট ব্র্যান্ড বুক্লেমের প্রতিষ্ঠাতা মিশেল স্কট-লিঞ্চের মতে, কালো চুলের যত্নকেন্দ্রিক ব্যবসা অনেক এগিয়েছে, তবু এখনো সার্বিক বিচারে অনেকটাই পিছিয়ে। তিনি ভাবছেন, যখন এ ব্র্যান্ডগুলো বড় করপোরেট কনগ্লোমারেটের অধীনে বিক্রি হয়ে যায়, তখন সে যত্ন কি আদৌ বেঁচে থাকে?
 

ধ্রুব নিউজের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

💬 Comments

Login | Register
Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)