সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

তুরস্কে বাংলাদেশি শাহেন শাহর ড্রোন ঝড়

ধ্রুব নিউজ ডেস্ক ধ্রুব নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : শনিবার, ১২ জুলাই,২০২৫, ১২:১৬ এ এম
তুরস্কে বাংলাদেশি শাহেন শাহর ড্রোন ঝড়


ভূমিকম্প, বন্যা, পাহাড়ধসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা উদ্ধারকাজ ব্যাহত করে এবং জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এই গুরুতর সমস্যা মোকাবিলায় এক তরুণ বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, তুরস্কের ইলদিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিকস ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহেন শাহ, একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন: ড্রোনের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সচল রাখা। তার এই উদ্ভাবন ইতিমধ্যেই তুরস্কের প্রধান গণমাধ্যমগুলোতে বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রচারিত হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে বেড়ে ওঠা শাহেন শাহর ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞানী হয়ে মানুষের কল্যাণে কিছু আবিষ্কার করা। তার সেই ভাবনা আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ২০২২ সালে তিনি এমন কিছু উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন যা অসংখ্য মানুষের উপকারে আসবে। পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে তুরস্কে, ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি তাকে দুর্যোগকালীন নেটওয়ার্ক সচল রাখার উদ্ভাবনে উৎসাহিত করে। তার এই গবেষণা প্রবন্ধ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বিখ্যাত 'ড্রোনস জার্নালে' প্রকাশিত হয়েছে।

শাহেন শাহর এই উদ্ভাবন দুর্যোগের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর কার্যপদ্ধতি অনেকটা ওয়াইফাই-এর মতো:
·         ড্রোনের ব্যবহার: যেখানে দুর্যোগ হবে, সেখানে কিছু ড্রোন নির্দিষ্ট দূরত্বে আকাশে উড়বে।

·         নেটওয়ার্ক তৈরি: এই ড্রোনগুলো নিজেদের মধ্যে সংযুক্ত হয়ে একটি বেজ স্টেশনের মতো কাজ করবে।

·         যোগাযোগ সুবিধা: ভূপৃষ্ঠে যারা থাকবে, তাদের কাছে এই ড্রোনগুলো নেটওয়ার্ক সুবিধা পৌঁছে দেবে, যা উদ্ধারকাজ এবং যোগাযোগে সহায়তা করবে।

শাহেন শাহর এই উদ্ভাবন তুরস্কের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণা পরিষদ এবং ইলদিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় পরিচালিত প্রকল্পে প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করেছে এবং এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। এই প্রকল্পে শাহেন শাহর সাথে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন ব্যাচেলর, মাস্টার্স এবং পিএইচডি শিক্ষার্থী যুক্ত আছেন।

যে কোনো উদ্ভাবন বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জ থাকে। শাহেন শাহও ইকুইপমেন্ট, ডিজাইন, এআই অটোমেশন এবং একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল কভার করতে কতগুলো ড্রোন লাগবে, তা নির্ধারণে সমস্যার মুখে পড়েছেন। তবে তিনি বুদ্ধিমত্তার সাথে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমাধান বের করে নিয়েছেন। তিনি আশাবাদী, তুরস্ক সরকার তার গবেষণা ও উদ্ভাবনকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং এটি অচিরেই আলোর মুখ দেখবে।

বাংলাদেশে প্রায়ই বন্যা হয়, যেখানে পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়ে। শাহেন শাহর উদ্ভাবন এই ধরনের পরিস্থিতিতে দারুণ কার্যকর হতে পারে। তিনি জানান, তার উদ্ভাবিত এই নেটওয়ার্ক সচল রাখার ব্যবস্থা বাংলাদেশেও কার্যকর করা সম্ভব এবং এ জন্য বাড়তি কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। তিনি এটি নিয়েও কাজ করছেন।

শাহেন শাহ ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর বাংলাদেশের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ইন আইটি ও বুয়েট থেকে এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন আইসিটিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ২০১৫ সালে তুরস্কের সরকারি বৃত্তি নিয়ে তিনি ইস্তাম্বুলের ইলদিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যান। এর আগে তিনি দুটি ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে কিছুদিন চাকরি করেছিলেন।

নতুন কিছু করার প্রবল আগ্রহই শাহেন শাহকে গবেষণায় চালিত করে। গবেষণায় সফল হওয়াটাই তার কাছে সবচেয়ে মুখ্য।

শাহেন শাহর অন্যতম অর্জন হলো চালকবিহীন গাড়ি উদ্ভাবন, যা অন্যান্য গাড়ির মাঝে দিব্যি চলতে পারে। এই কাজে তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যোগাযোগের বিলম্ব কমিয়ে ১০০ মিলিসেকেন্ডে নামিয়ে আনা। এই কাজের জন্য তিনি ২০২১ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইনভেনশন, ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি এক্সিবিশনে (আইটেক্স) স্বর্ণপদক পেয়েছেন। এছাড়াও, তিনি বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষকের তালিকায় স্থান পেয়েছেন, যা স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও এলসেভিয়ার কর্তৃক গবেষণার সাইটেশন সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। ২০২৩ সাল থেকে তিনি এই তালিকায় রয়েছেন এবং বর্তমানে তিনি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্সের জ্যেষ্ঠ সদস্য।

আগামীতে শাহেন শাহ তার উদ্ভাবনী ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান এবং দেশের প্রয়োজনে কাজ করার সুযোগ পেলে অবশ্যই এগিয়ে আসবেন। তরুণ গবেষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "কোন বিষয়ে গবেষণা করলে বেশি আয় করা যাবে, বেশি জনপ্রিয় হওয়া যাবে–নতুন গবেষকদের মধ্যে এমন একটা ঝোঁক দেখা যায়। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মনে করি, নিজের যেটি পছন্দ, নিজের যেটি ভালো লাগে সেটি নিয়ে কাজ করা উচিত। তাহলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।"

ধ্রুব নিউজের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

💬 Comments

Login | Register
Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)