সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

এক কাপ কফির ভেতর লুকানো গল্প

ধ্রুব নিউজ ডেস্ক ধ্রুব নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : শনিবার, ১১ অক্টোবর,২০২৫, ০৯:৩০ পিএম
এক কাপ কফির ভেতর লুকানো গল্প

প্রতিবছর ১ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব কফি দিবস (ওয়ার্ল্ড কফি ডে)। এটি কেবল একটি পানীয় উদ্‌যাপনের দিন নয়; বরং কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত কফির সঙ্গে জড়িত সবার অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। এক কাপ কফির স্বাদে যেমন জাগে প্রাণের উচ্ছ্বাস, তেমনি এর ভেতরে লুকিয়ে থাকে কৃষি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও টেকসই উন্নয়নের এক বিশাল ইতিহাস।

কফির জন্মকথা কফির উৎপত্তি নিয়ে নানা কিংবদন্তি রয়েছে। সবচেয়ে প্রচলিত কাহিনিটি ইথিওপিয়ার। বলা হয়, এক রাখাল তাঁর ছাগলদের কফিগাছের লালচে ফল খাওয়ার পর অস্বাভাবিকভাবে চঞ্চল হতে দেখে কৌতূহলী হন। সেখান থেকেই কফির বিস্ময়কর প্রভাব আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তী সময়ে আরব বিশ্বে কফি ছড়িয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার মানুষ কফির স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
আজ এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বাধিক বাণিজ্যিক পণ্য, তেলের পরেই যার অবস্থান।

বিশ্ব কফি দিবসের তাৎপর্য
২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক কফি সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশন–আইসিও) আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব কফি দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়। এর উদ্দেশ্য শুধু কফিকে উদ্‌যাপন নয়, বরং কফিশিল্পের নানা সমস্যাকে সামনে আনা।

কৃষকদের অবদান স্বীকৃতি: বিশ্বের প্রায় ১২৫ মিলিয়ন মানুষ সরাসরি কফি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। তাদের শ্রম ও জীবিকা কফির ওপর নির্ভরশীল।
ন্যায্য বাণিজ্য: অনেক সময় কফির দাম বাজারে কমে গেলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পান না। বিশ্ব কফি দিবসে এ বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়।
টেকসই কৃষি: জলবায়ু পরিবর্তন কফি উৎপাদনে বড় হুমকি। এই দিনে টেকসই কৃষি পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।
ভোক্তা সচেতনতা: কফি শুধু এক কাপ পানীয় নয়, বরং এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

কফি ও বিশ্বসংস্কৃতি
কফি এখন আর কেবল পানীয় নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক পরিচয়। ইউরোপের শহরগুলোতে কফিশপগুলোকে বলা হয় ‘থার্ড প্লেস’Íবাড়ি ও কর্মস্থলের বাইরে মানুষের মিলনস্থল। সাহিত্য, রাজনীতি ও শিল্পকলার অনেক আলোচনা জন্ম নিয়েছে কফিশপকে কেন্দ্র করে। ইতালিতে এসপ্রেসো, তুরস্কে তুর্কিশ কফি, মধ্যপ্রাচ্যে আরবীয় কফি এবং আমেরিকায় কফি চেইন সংস্কৃতিÍপ্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব কফি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

কফির অর্থনীতি
বিশ্বজুড়ে কফির বাজারের আকার ২০২৪ সালে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েক ডজন দেশ কফি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের প্রধান কফি উৎপাদক দেশ হলো ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, কলম্বিয়া ও ইথিওপিয়া। কফিশিল্পে কোটি কোটি মানুষ জড়িতÍকৃষক, সংগ্রাহক, রপ্তানিকারক, পরিবেশক ও কফিশপ উদ্যোক্তা। আন্তর্জাতিক বাজারে কফির ওঠানামা অনেক দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশে কফির যাত্রা
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চা-ই ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কফির জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। রাজধানী ঢাকা ও বড় শহরগুলোতে ক্যাফে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি ও সিলেটে কফি চাষ শুরু হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের কফি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে সম্ভাবনা তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরে ক্যাফেগুলো এখন শুধু কফি পান করার জায়গা নয়, বরং বন্ধুত্ব, সৃজনশীলতা ও ব্যবসায়িক আলোচনার মিলনমেলা।

কফি ও পরিবেশ
কফি উৎপাদন সরাসরি পরিবেশের সঙ্গে জড়িত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত এবং রোগবালাই কফি উৎপাদনে হুমকি সৃষ্টি করছে। এ কারণেই টেকসই কৃষি, জৈব চাষাবাদ ও ন্যায্য বাণিজ্যের (ফেয়ার ট্রেড কফি) প্রতি গুরুত্ব বাড়ছে।

ধ্রুব নিউজের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

💬 Comments

Login | Register
Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)